ছোট ঘর নিয়ে ভাবনা?
ঘর যতো ছোট বা বড়ই হোক, সেটা আমাদের আপন একটি পৃথিবী। আর সেই ঘরটি সুন্দর আর শান্তিময় হউক সেটা আমরা সবাই চাই। বাঙালি মাত্রই শান্তি প্রিয়। আকাশের নিচে এক টুকরো জমিতে সুন্দর ও সুখি ভাবে থাকতে আমাদের থাকে নিদারুন অনন্তকালের চেষ্টা। বলা হয় নিজে ঘর, নিজ বাসার মত সুখ নাকি আর কোথাও নেই। আর তাই আমাদের সর্বোত্তম চিন্তা চেতনা সেই ঘরটি ঘিরেই থাকে। চেষ্টা থাকে ছিমছাম করে সাজিয়ে তোলার। সাধ আর সাধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা আপন ব্যাক্তিত্ব। তবে প্রায়সই আধুনিক ফ্ল্যাটগুলো অনেক ছোট হয়। সেজন্য সত্যি বলতে কিছু ভাবনা আমাদের এই ছোট ঘরের ব্যাপ্তি নিয়েও থাকে।
আমরা বর্তমানে ছোট ফ্ল্যাট এ অনেকটাই অভ্যস্ত। তবে ছোট্ট সেই বাসার অন্দরসজ্জা নিয়ে যেন আমাদের চিন্তার শেষ নেই। আমরা এখনও চিন্তা করি ভালোবাসার সেই ঘরে কোন আসবাব কোথায় রাখলে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে, কেমন আসবাব কিনলে ঘরের জায়গা ভালো দেখাবে, দেয়ালে কেমন রঙ হলে ভালো হয়, ঘর সাজানির জন্য কি কিনতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সর্বোপরি আমাদের সমস্ত চিন্তাজুরেই থাকে কিভাবে ছোট এই ঘরটাকে আরো বুদ্ধি করে সাজানো যায় যাতে একটু বড় দেখায়। এমন হাজারো প্রশ্নের সমাহারে আমরা প্রায়সই খেই হারিয়ে ফেলি।
পছন্দ, চাহিদা, রুচিশীলতা এবং স্বক্ষমতা, এই চারটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে কিভাবে ছোট একটি ফ্ল্যাটকে নিজের পৃথিবীর মতো করে সাজানো যায়, আজ আমরা সেই ব্যাপার গুলো নিয়েই কথা বলবো। সম্প্রতি নতুন ভাবে যাত্রা শুরু করা মেলিওর ডেকো’র কো-ফাউন্ডার এবং ডিরেক্টর মাহফুজুর রহমান, ছোট ঘরকে কিভাবে ভালো করে সাজানো যায় তা নিয়ে আলোচনা কিছু রুচিশীল পরামর্ষ দিয়েছেন। চলুন দেখি কিভাবে ছোট ঘরকে বড়সড় একটি ফ্ল্যাটের মতো করে সাজানো যায়।
আলো ও বাতাসের আনাগোনা
আলো বাতাসের ব্যাপারটি শুধু ছোট ঘরের জন্যই না, বড় ফ্ল্যাটের জন্য ও আবশ্যক। আলো বাতাসের সঠিক সঞ্ছালন ঘরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। দম বন্ধ করা অনুভুতিটা আর থাকে না। আলো বাতাস প্রবেশ করার রাস্তায় হাল্কা রঙের পর্দা ব্যবহার করা ভালো। আর ভারী আসবাব এসব স্থানে কখনই রাখা উচিত না। শুধু বাত্র ফ্যান বা এসির বাতাসে অনেক সময় অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সবাস্থ্যকর থাকে না। তাই সবার প্রথমে খেয়াল রাখুন আলো বাতাসের আনাগোনার বিষয়টি। এতে আপনার মনও প্রফুল্ল রাখে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
একটি প্রবাদ প্রায়ই আমরা শুনি যে, মানুষের বাসার রান্নাঘর এবং বাথরুম, এই ২টি জায়গার অবস্থা দেখলেই নাকি তার রুচি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ধারণা পাওয়া যায়। সাজানোটা অবশ্যই রুচির ব্যাপার। কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কোন গাফলতি করা উচিত না কখনই। বিশেষ করে ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে, কখনো এটা নিয়ে হেলা ফেলা করা ঠিক না। শুধু বাথরুম বা কিচেন ই নয়, পুরো ঘরের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প কোন নেই।
রঙের কারসাজি
ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে দেয়াল বা ফারনিচারের রং একটি বিশাল অঞ্ছল জুড়ে থাকে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন আসবাবপত্রের রঙ হালকা টাইপের কিছু হয়। তাতে দম বন্ধ করার ব্যাপারটি আর থাকে না। ছোট ঘরে থাকলেই যে সব কিছু সহ্য করে নিবেন। এই ধ্যান ধারণা থেকে এখন বের হওয়া উচিত। দেয়ালের রঙ হিসেবে উজ্জ্বল কিছু ব্যবহার করে দেখতে পারেন। সূর্যের আলোয় সেই রঙ পুরো ঘরে প্রতিফলিত হয়ে সম্পূর্ণ অনন্য একটি আবহ তৈরি হবে।
আসবাবে বৈচিত্র ও আকার
আসবাবপত্রে বৈচিত্র নিয়ে আসুন। সকল ফার্নিচার একই উচ্চতার কিনবেন না। ছোট ফ্ল্যাট আরো ছোট দেখাবে। তাই কিছুটা নিচু উচ্চতার আসবাব ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ঘর বড় দেখাবে এবং আলো বাতাসের সমাহার থাকবে সবসময়।
সবুজের সমারোহ এবং কৃত্রিম ফুল
ঘরে সজিবতা নিয়ে আসুন ছোটখাট গাছপালা দিয়ে। প্রাণবন্ত দেখাবে যদি হাল্কা আসবাব পত্রের পাশে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা যায় সবুজ বা রঙ বেরঙ্গের গাছগুলো। অথবা কৃত্রিম ফুল ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ঘরের চারিপাশ রঙ্গিন করে দিবে। ছোট ঘর সাজাতে সজীবতা আর সতেজটা আওন্যতম মুখ্য উপাদান।
ফ্লোরে টাইলসের ব্যবহার
বড় ফ্ল্যাট সাজাতে বিভিন্ন প্যাটার্নের টাইলস ব্যাবহার করা উত্তম। তবে ছোট ঘরের জন্য সাদা রঙের টাইলসই সবচেয়ে ভালো। সাদা টাইলস ঘরের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে আর ঘরকেও বড় করে দেখায়। যদিও সাদা রঙের টাইলস খুব সহজেই ময়লা হয়ে যায়, তাই বাথরুম এবং রান্নাঘরে অন্য রঙের টাইলস ব্যাবহার করে দেখতে পারেন।
ভারি আসবাবপত্রের ভাবনা
ছোট ঘরে যত কম পারা যায়, তত কম ভারী আসবাব ব্যাবহার করা উচিত। ভারি ফার্নিচার একাধারে বেশি জায়গা নেয়, আলো বাতাস চলাচলে বাঁধা দেয় এবং ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করে। ভারি ডিজাইন ও যতটা পারা যায় ব্যবহার না করা ভালো। ছোট রুমের আকার আরো ছোট করে দেয়। তাই আইরন বা পারটেক্সের তৈরী আসবাব বানিয়ে নিতে পারেন। খরচ কম পরবে, গতানুগতিক হবে এবং ঘরের আকার ও বড় দেখাবে।
দেয়ালের সাজ
ছোট ঘরের দেয়ালে সাদা রঙ ব্যাবহার করা উত্তম। সাদা টাইলসের পাশাপাশি সাদা দেয়াল ঘরকে বিশাল দেখাবে আর দেখতেও ভালো লাগবে। দেয়ালে নানা রঙের ওয়াল পেপার ব্যবহার করতে পারেন বৈচিত্র এনে দিবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই ওয়াল পেপার লম্বা লম্বি ভাবে লাগাবেন।
এছাড়াও দেয়ালে কোন আচর পরতে দিবেন না। সব সময় পরিষ্কার রাখুন অতিরিক্ত কোন রঙ বা পেইন্টিংস না রাখাই ভালো। নতুবা ছোট ঘর আরো ছোট দেখাবে। যে কোন ছবির ফ্রেম রাখলে সেটাও লম্বালম্বি ভাবে বাঁধাই করুন।
কৃত্রিম আলোর ব্যবহার
ঘরে পর্যাপ্ত আলো না ঢুকলে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করুন। বর্তমানে ঘরের সাইজ অনুযায়ী নানা রঙের এবং বাহারের লাইট পাওয়া যায়। ড্রয়িং রুমে সঠিক জায়গায় লাইট টি রাখুন। চাইলে কর্নারে ল্যাম্প ও রাখতে পারেন। রাতে এই আপনার এই ছোট দুনিয়া কেও আলোয় ভরিয়ে দিবে।
আয়না রাখা, না রাখা
ছোট ঘরে আয়না জিনিস টা খুব গুরুত্ব বহন করে। চেষ্টা করুন ডাইনিং বা ড্রয়িং রুমের একপাশ সম্পূর্ণ আয়না দিতে। রুমের আকার বিশাল দেখাবে আর ফ্ল্যাটও ছোট মনে হবে না আর। দরজা বা জানলায় থাই গ্লাস ব্যবহার করুন। খরচ কম হবে।
পরিপাটি ডাইনিং এবং ড্রয়িং রুম
সবার প্রথমে ড্রয়িং রুমের আসবাব পছন্দ করুন। বেতের চেয়ার বা সোফা কিনে দেখতে পারেন ছোট ফ্ল্যাটের জন্য। এছাড়াও কর্নার গুলোয় তাকের ব্যবস্থা করে বই রাখতে পারেন। দারুন দেখাবে আর ঘরের বাসিন্দার সুন্দর রুচি ও প্রকাশ করে।
আলাদা কোন ডাইনিং রুম না থাকলে, বসার ঘরের এক কোনায় ৪ ফিট বাই ৩ ফিট মাপের ডাইনিং টেবিল রেখে দেখতে পারেন। চারজন বসতে পারলেই হলো। চেয়ার গুলো ছিপ ছাম এবং স্লিম হলেই ভালো। জানালার পাশে হলে সবচেয়ে ভালো হয়।
ছোট একটি ঘরকে এমন সকল উপাদান দিয়ে সাজানোর সকল উপকরণ ই আছে মেলিওর ডেকো’র। যেকোন ধরনের আসবাব, হোক ডাইনিং বা ড্রয়িং রুমের, অথবা দেয়ালের পেইন্টিংস, লাইট, ল্যাম্প, এই সবের অনন্য সমাহারে পরিপূর্ণ মিরপুর ডিওএইচএসে অবস্থিত এই হোম ডেকর প্রতিষ্ঠনটি। সাথে যেকোণ ধরণের ইন্টেরিওর ডিজাইন সার্ভিস ও দিয়ে থাকে ছোট বা বড় ফ্ল্যাটের জন্য সমান ভাবে।
মনে রাখবেন। ঘরের রঙের গুরুত্ব ইনে। লাল বা হলুদ রঙ ব্যবহারের পূর্বে ভালো করে লক্ষ্যকরে নিন আপনার ব্যাক্তিত্বের সাথে কোনটি ভালো যায়। আনন্দ এবং উচ্ছলতায় কাটুক আপনার প্রতিটি সময়, আপনার ছোট্ট ঘরে।