সাজিয়ে তুলুন আপন আঙিনা
নিজের একটি ঘর, পরিপাটি বিছানা, আর সুন্দর কিছু আসবাবপত্র। হোক না ছোট, নিজের বাসাটিকে আপন মনে সাজিয়ে তোলার বাসনা কার না থাকে? সকালের এক চিলতে রোদ্দুর জানলা দিয়ে ঢুকে রাতের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিক। নতুন দিনের শুরুতে সুন্দর পরিপাটি একটি ঘরে চোখ মেলে তাকালে, শরীর ও মন দুটোই চনমনে হয়ে উঠে। তবে একান্তই নিজের মন মতো আপন ঘরটি সাজানো সবসময় চাইলেই সম্ভব হয়না। সাধ আর সাধ্যের মাঝে থাকে বিশাল ফারাক। কিন্তু বাঙালি মন। বুঝতেই পারছেন। যেভাবেই হোক, সবসময় আমাদের মন থাকে ওই সুন্দর করে অ্যাপার্টমেন্টটি সাজিয়ে তোলার দিকেই। চলুন তবে আজ জেনে নেই কম খরচে নিজের ছোট্ট আঙ্গিনাটি আরো কত সুন্দর করে তোলা যায়। পরিশেষে কিছু ছোট খাটো ভুলের উপর ও একটু আলোচনা করবো। চলুন দেখে আসি সেই কৌশলগুলো একনজরে।
দেয়ালটি করে ফেলুন আকর্ষণীয়
দেয়াল সাজানোর জন্য যে একগাদা টাকা খরচ করতে হবে কে বলেছে? নিজেই নিজের মনমতো সাধ্যানুযায়ী ভাবে চেষ্টা করুন। বর্তমানে কম খরচায় অনেক সুন্দর অয়েল পেইন্টিং পাওয়া যায়। এছাড়া শুধু উজ্জ্বল রঙের কারিশমায় ও দেয়াল করে তোলা যায় আকর্ষণীয়। এছাড়াও আপনার প্রিয় কোন ছবি, ফটোগ্রাফ বাঁধাই করে দেয়ালে টানিয়ে দিতে পারেন। শোভা বৃদ্ধির সাথে সাথে ইউনিক লুক নিয়ে আসবে। নতুন কিছু হোম ডেকর কোম্পানি সম্প্রতি চালু হয়েছে যারা আপনার প্রয়োজনে এই কাজ গুলো করে দিতে পারে নিতান্তই নাম মাত্র খরচে।
সম্ভব হলে হ্যান্ডমেড
খরচ বাঁচাতে আপনি কিছু জিনিস নিজের হাতেই তৈরি করতে পারেন। যেমন ধরুন কলমদানি, ফুলদানি, ফ্রেম ইত্যাদি। খুবই কম পরিশ্রমে এগুলো বানিয়ে ফেলা যায়। ইউটিউবে এমন হাজারো হ্যান্ডমেড জিনিসের ভিডিও পাবেন। ঘরের সবকিছু ভালো দোকান থেকে কিনলেই সুন্দর হয় না। সম্ভব হলে ঘরে নিজে হাতে বানানো জিনিস রাখুন। নিজস্বতা আসবে আর দেখতেও ভালো লাগবে।
পুরোন আসবাবে নেই ভয়
অনেক কেই বলতে শুনি যে তারা সেকেন্ড হ্যান্ড আসবাব কিনতে চান না। খেয়াল করে দেখুন, সব নতুন কিনতে হলে কিন্তু সেই গাদা গাদা টাকা খরচ হবে। দেখেশুনে পুরনো আসবাব বা ঘর সাজুনি যদি ভালো পাওয়া যায়, তাহলে খারাপ কি? শুধু দেখবেন যেনো সুন্দর হয় আর আপনার ঘরের বাকি সব আসবাবের সাথে যায়। আর সাধ্যে কুলোলে, নতুন তো আছেই কেনার জন্য।
ভবিষ্যতের কথা ভুলে যাবেননা যেন
অবশ্যই এমন কোন জিনিস কিনবেন না যা খুব ভারী আর নাড়াচাড়া করতে কষ্ট হয়। ভারী কোন কিছু কেনার আগে এই ব্যাপার গুলো মাথায় রেখে দ্বিতীয়বারের মতো ভাবুন। অদূর ভবিষ্যতে বিয়ে করবেন। বাচ্চা এখন হয়তো নেই, কিন্তু কিছুদিন পর? ভারী আসবাব জায়গা বেশি নেয়। আর বাচ্চা-কাচ্চার জন্য সবসময় হালকা জিনিসই ভালো। তাই সামনের দিনের কথা ভাবুন আর সেইভাবেই সাজিয়ে তুলুন আপনার আপন আঙিনা।
শিখে ফেলুন স্প্রে পেইন্ট
খুব আধুনিক একটি ধারণা এই স্প্রে পেইন্ট। নিজে নিজেই শিখে ফেলতে পারেন। অসংখ্য টিউটোরিয়াল পাবেন ইন্টারনেটে। স্প্রে পেইন্ট একাধায়ে ঘরের একপাশের দেয়ালে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। নতুন একটা লুক আনবে এছাড়াও পুরনো ভাঙা আসবাবেও স্প্রে পেইন্ট ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এক নজরে ঘরের চেহারা পাল্টে দিতে যথেষ্ট। আমার মতে খুব শীঘ্রই এটি শিখে ফেলা উচিত আপনার। অনেক খরচ বেঁচে যাবে।
ঝেড়ে ফেলুন কার্পণ্য
ভালো জিনিস কিনতে কখনো কার্পণ্য করবেন না। মনে রাখবেন ঘরটি আপনার। নিজের ব্যাক্তিত্বের প্রকাশ এই ঘরের মাধ্যমেই মানুষের কাছে প্রকাশ পায়। তবে এটা ঠিক যে অনেক ব্যাপারেই আপনার খরচ বাঁচিয়ে চলতে হবে। কিন্তু তার মানে এইনা যে কঞ্জুষ হতে হবে। যেমন ধরুণ বিছানার চাদর। ঘরের একটি বিশাল অঞ্চল জুড়ে থাকে।। সাথে আছে পর্দা, কুশন, বালিশের কভার, কার্পেট। এগুলোর ব্যাপারে কখনোই কার্পণ্য করবেন না। আরো যেমন ধরুন চায়ের টেবিল, ট্রে। এগুলোই গেস্ট এর সামনে আসে বেশি। যথাসাধ্য চেষ্টা করুন সেরা এবং সুন্দর জিনিসটি কিনতে।
একের ভেতর দুই
এমন অনেক আসবাব বর্তমানে পাওয়া যায় যা একই সাথে অনেক কাজ করতে পারে। সেটা হতে পারে ইলেক্ট্রনিক বা কাঠের তৈরি। এই যেমন ড্রেসিং টেবিল এর টুল। এটা একই সাথে বসার কাজে ব্যবহার করা যায় আবার নাশতা দেবার কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে। আরো যেমন বড়সর কিছু জিনিষের মধ্যে আছে ড্রয়িং রুমের ডিভান। ইচ্ছে হলেই সেখানে শুয়ে রাত কাটানো যায়। এমন একই সাথে বিভিন্য কাজে ব্যবহার করা যায় আসবাব কিনুন। নতুনত্ব আসবে আর জায়গাও বাঁচবে।
কিছু সঞ্চয় রাখুন দরকারি জিনিসের জন্য
সঞ্চয় করাটা খুব জরুরি। আপনি যখন ঘরের জন্য শপিং করছেন, কিছুনা কিছু ব্যাপার ভুলে যাবেনই। তাই কিছু বাজেট হাতে রাখুন। এই ধরুন আপনি খুব সুন্দর একটি ডাইনিং টেবিল কিনেছেন।হাতে কিছু টাকা রাখেননি বলে এটার জন্য পরিপাটি একটি ডিনার সেট কিনতে পারছেন না। এমন যেনো না হয়। এছাড়াও হঠাত দামি কোন জিনিস ভেঙ্গে গেলে যেনো সাথে সাথে কিনতে পারেন, তাই কিছু সঞ্চয় সবসমইয় রাখুন।
পুরোন দিনের আসবাব ফেলে দেবেন না
অনেক সময়ই আমরা পুরনো দিনের আসবাব ফেলে দেই এই ভেবে যে এটা আধুনিকতার সাথে যায় না। সত্যি বলতে খুবই ভুল ধারণা এটি। মা-বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া পুরনো কিছু আসবাবপত্র সযত্নে নিয়ে আসুন। নতুন ভাবে বার্নিশ করে দেখুন কেমন লাগে। পুরো ঘরের চেহারাই পাল্টে দেবে। আর আপনার অ্যাপার্টমেন্টে বনেদি বনেদি ভাব নিয়ে আসবে। কোন কিছুই ফেলার না। শুধু দরকার সঠিক জিনিসটি চিনতে পারা।
ব্যবহার করুন ঘরের প্রতিটি ইঞ্চি
ছোট্ট এই অ্যাপার্টমেন্টটি ঘিরে আমাদের কতই না বাসনা। তাই খেয়াল রাখবেন জেনো সঠিক ভাবে প্রতিটি খালি জায়গা ব্যবাহার করা হয়। যেমন ধরুন ড্রয়িং রুমের কর্নার। কখনই এটা নিয়ে ভাবি না। অথচ কম খরচে যেকোন কর্নার শো-কেস রাখা যায়। এছাড়া পাওয়া যায় বাহারি রকমের স্ক্লাপচার। আবার যেমন চিন্তা করুন বিছানার নিচের খালি জায়গাটি। খুব ভালো ভাবেই ভারী অদরকারী জিনিসপত্র সেখানে রাখতে পারেন। কর্নার শো-কেসে ঘর সাজুনি রাখার পাশাপাশি সাজিয়ে রাখতে পারেন বই-পত্র। ঘরটা খুব সুন্দর লাগবে।
ঘরের আলো বাতাস
এটা নিয়ে শেষে কথা বললেও গুরুত্ব কিন্তু কম না। আলো বাতাসের সুব্যবস্থা না করে যতই ঘর সাজান, কোন কাজে দিবে না। বাতাস আসা যাওয়া করতে না পারলে ঘরে ভ্যাপসা একটি আবহাওয়া তৈরী হয়। আর সু-স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক আলো বাতাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ঠিক ভাবে যেনো আলো প্রবেশ করতে পারে তাই দরজা বা জানালার সামনে কোন ভারি পর্দা লাগাবেন না। আর বাতাস ঠিকভাবে সঞ্চালনের জন্য যেকোন জায়গায় কখনই ভারী আসবাব রাখবেন না। খেয়াল রাখুন এগুলোর প্রতি। যতই কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করুন, ন্যাচারাল লাইট বা সূর্যের আলোর কোন বিকল্প নেই।
বর্তমানে ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশে নতুন কিছু হোম ডেকর কোম্পানি আছে যারা কম খরচে খুব সুন্দর করে আপনার ঘর সাজিয়ে তুলতে পারে। সম্প্রতি ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছে মেলিওর ডেকো। মিরপুর ডিওএইচেস এ অবস্থিত এই হোম ডেকোর এজেন্সি থেকে আপনি চাইলেই কম খরচায় আপনার অ্যাপার্টমেন্টটি সাজাতে সবকিছু পাবেন। দেয়াল পেইন্টিং, সেন্টারপিসেস, ল্যাম্প থেকে শুরু করে লাইট, সোফাসেট, অফিস আসবাব সব কিছুই পাবেন কম খরচে।
কেমন লাগলো টিপ্স গুলো? জানাতে ভুলবেন না। আরো কিছু পোস্ট শীঘই আসছে ঘর সাজানো নিয়ে। সাথেই থাকবেন।